কেউ যদি শারীরিক গঠন নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে, তাহলে তাকে কিভাবে উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়?

আমি ছোটকালে খাটো ছিলাম (এখনও আছি অবশ্য)। স্কুলের দুষ্টু পাজি ছেলেরা আমাকে বলত, সাব্বির, দেখি তুমি এটা ইংরেজীতে অনুবাদ করতে পারো কি না - আমি হই কিন্তু দুই। সহজ সরল মনের আমি সেটা অনুবাদ করে বলতাম - I am but two. সেটা শুনবার পর তাদের সেইরকম হাসা হাসি। পরে আসল কাহিনি বুঝতে পেরে মন খারাপ করেছিলাম। ওরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যেতাম। (যারা এখনও ধরতে পারেন নি তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি - আমাদের এখানে খাটো লোকদের বেঁটে > বাইট্টা > বাট্টু বলে ডাকে।) আমার চুপ করে থাকা দেখে পরে আমাকে আর কিছু বলত না। তবে সবসময় মৌনতাই যে কাজ করবে তা কিন্তু নয়।

আরও কিছু বছর পরে আমি মোটাও হলাম। পেটে ভাল মেদ ভুড়ি জমে গিয়েছিল। ভ্যানে চড়ে যখন স্কুলে যেতাম তখন সেটির কাঁপুনিতে আমার উদরও কাঁপত। তাই দেখে ভ্যানের সহযাত্রী আমাকে খেপাতো - তুলতুলে ভুড়ি, মোটাসোটা নাড়ি। ভাবলাম চুপ করে থাকি। কয়েকদিন পরে এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু কিসের কি। ওদের এই কথাত্যাচার যেন দিন দিন বাড়তে লাগল। এসব দেখে আমার বাল্যকালের বন্ধু ঐ ছেলেটাকে জব্দ করার জন্য ওর ব্যাগের মধ্যে বানোয়াট একটা প্রেমপত্র রেখে দেয়। পরে সেটা নিয়ে ওকে মারাত্মক পঁচানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি অভিভাবক পর্যায়ে গড়ায় এবং বিষয়টির সুরাহা হয়।

আসলে বেশিরভাগ সময়ে শারীরিক গঠন নিয়ে হাসি ঠাট্টার মুখোমুখি হতে হয় ছোটবেলায় সহপাঠী ও সমবয়সীদের দ্বারা। এর জন্য আমি দায়ী করব অভিভাবকদের। তারা সন্তানদেরকে শিক্ষা দিতে পারেন নি যে, আকার আকৃতি নিয়ে মশকরা করাটা খুবই নিচু মনমানসিকতার পরিচায়ক।

একটু matured হয়ে গেলে এগুলো নিয়ে সমালোচনা থেমে যায়। তারপরও আড়ালে আবডালে টিপ্পনী কাটতে শোনা যায়। আসলে মানুষ সহজাত ভাবেই অন্যকে হেয় করতে মজা পায়।

এখন ধরুন আপনাকে নিয়ে কেউ এরকম করল। আপনি কি করতে পারেন?

ঠাট্টা মশকরা টা যদি আপনার আকৃতির এমন একটা বিষয় নিয়ে হয় যেটা আপনি চাইলে পরিবর্তন করতে পারবেন এবং আপনি মনে করেন যে সেটা আসলে আপনার জন্য আদতে ভালই হবে (যেমন - আপনি অতিরিক্ত মোটা) তাহলে আপনি চেষ্টা করুন আপনার মধ্যে সেই পরিবর্তন আনার। এটাকে positive criticism হিসেবে ধরে নিন। মনে মনে জপুন, নিন্দুকেরে বাসি আমি ভাল।

আর যেটা আপনি কোনভাবেই পরিবর্তন করতে পারবেন না (যেমন খর্বতা) সেক্ষেত্রে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন - মৌনতা, এড়িয়ে চলা। পাল্টা জবাবও দিতে পারেন যেমনটি আমি করেছিলাম। ওদেরকে অনুবাদ করতে বলেছিলাম, আমি হই কিন্তু দূরে।

আরেকটি কার্যকরী উপায় হতে পারে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত নিজের আকৃতি নিয়ে নিজেই মশকরা করা। তাহলে আর আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা করার ফুরসতই পাবে না।

সর্বোপরি শারীরিক আকার আকৃতি নিয়ে খোঁচা দেওয়া বা মশকরা করা এগুলো খুবই খারাপ একটি কাজ। কারণ হতে পারে যাকে নিয়ে করা হচ্ছে তার এসবে কোন হাত ছিল না। বিধাতা প্রদত্ত ছিল। তাই সবারই এসব হতে বিরত থাকা উচিত এবং আমাদের সন্তানদেরকেও সেই শিক্ষা দেওয়া উচিত।