রিলেশন || রোমান্টিক গল্প
আমার সাড়ে ৩ বছরের রিলেশনটা ভেঙ্গে গেলো।যখন আমি মেডিকেল ১ম বর্ষে এক্সাম দেই।শুনলাম সে বিয়েও করে নিয়েছে।দেখতে পেলাম বউয়ের সাথে তার কিছু অন্তরংগ ছবি।দেখে মনে হল,রিলেশনের বিয়ে মানে আমার সাথে কমিটেড থাকা অবস্থায় অন্য রিলেশনে জড়িয়ে গেছে।
পরীক্ষায় কি লিখেছি জানিনা।কোনরকম পরীক্ষায় পাশ করলাম।যখন আমার বান্ধবীরা সবাই মেডিকেল,ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট,জীবন সাজাতে,গোছাতে ব্যস্ত তখন জীবন আমার কাছে অসহ্য।যেসব ছেলেদের সাথে কথা বলতাম সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম।
বান্ধবীরা আমার এ হাল দেখে বলল, আরেকবার রিলেশনে জড়িয়ে যেতে।সবাই ত্ এক না।তখন যার সাথে বেশি কথা বলতাম তাকে একটা চান্স দিয়ে দেখলাম কিন্তু নাহ্।সে আমাকে বুঝতে পারলো না।
একটা সময় মনে হলো-নাহ!এভাবে তিলে তিলে প্রতিদিন মরার চাইতে এক্কেবারে নিজেকে শেষ করে দেই।সুইসাইড করার ট্রাই করলাম কিন্তু আম্মুর কাছে ধরা পড়ে গেলাম।
ভেবেছিলাম আম্মু খুব মারবে,বকাঝকা করবে।কিন্তু নাহ!
আম্মু বললেন-সুইসাইড যার জন্য করবা তুমি মরলে তার কিছুই আসবে যাবে না।মরার পরে যে তুমি খুব সুখে থাকবা,বেহেশতে যাবা সেটাও না।দোযখের আগুনে জ্বলবা।আর সে ঠিকই বউ বাচ্চা নিয়া জীবন আনন্দে কাটাই দিবে।তুমি এভাবে জীবন টা নষ্ট না করে ধৈর্য্য ধরো।আল্লাহ তোমাকে ধৈর্যের পুরষ্কার দিবে।
আম্মুর কথা শোনার পর থেকেই নামাজ পড়া শুরু করলাম।নামাজে দাড়ালেই চোখে পানি চলে আসতো।আমি মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কিছুই চাইতে পারতাম না শুধু কান্না করতাম।নিজের বাজে অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার চেষ্টা করলাম।ব্যস্ত থাকতে শুরু করলাম।
মেডিকেলের পাশাপাশি বিভিন্ন বই, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া শুরু করলাম।একটা ইংরেজি কোচিং -এ ভর্তি হলাম।ভাবলাম সময় কাটানোর জন্য কিছু করা দরকার।কিন্ডার গার্টেন এ জব নিলাম।দিনের বেশিরভাগ সময় বাচ্চাদের সাথে কাটাতাম।আস্তে আস্তে টিউশন শুরু করলাম।লেখাপড়া,ছোট্ট জব আর টিউশন,আর ফাঁকেফুঁকে ফেইজবুকিং...,এভাবেই দিন কাটতে লাগলো....!
এক রাতে আমার আত্ত্বীয়ের জন্য রক্ত লাগবে।আমার বন্ধু একটা নাম্বার দিয়ে বললো-উনার নাম সজীব।সারা বাংলাদেশে ব্লাড ডোনেশন নিয়ে কাজ করে।একদম ফ্রী তে সবাই কে হেল্প করে।খুবই ভালো মানুষ।তোকে অবশ্যই সাহায্য করবে।যোগাযোগ কর।
তখন রাত ২ টা।কল দেয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করলেন।
উনি বললেন সকালের মধ্যে ডোনার পাঠাবেন।রোগীর ব্লাডের প্রয়োজন হয় নি।তাই আর সকালে উনার সাথে যোগাযোগ করিনি।
ফেইজবুকে একদিন হঠাৎ উনার আইডি টা সামনে আসলো।অনুমান করলাম উনিই হয়তো সেই সজীব ভাই।যদি নেক্সট কারো ব্লাড লাগে উনার সাথে যেনো যোগাযোগ করতে পারি তাই উনাকে রিকুয়েস্ট পাঠালাম।
উনার ফ্রেন্ডলিস্টে নিজের জায়গা করে নিতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছিলো।
উনার পোস্টগুলা দেখে দেখে মন ভরে যেতো।নারীদের প্রতি সম্মান,পজিটিভ মেন্টালিটি আর মানুষের উপকারে ভরপুর ছিলো উনার ফেইজবুক ওয়াল টা।যত দেখতাম ততই মুগ্ধ হতাম।
২_বছর উনার ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলাম কিন্তু উনি একদিনও ইনবক্সে নক দেন নি।মাঝে মাঝে ছবিতে টুকটাক কমেন্ট করতো।
একদিন ঘুম থেকে উঠে ফেইজবুকে ঢুকতেই উনার (সজীব) ছবি সামনে এলো।এটি এন চ্যানেল এ ইয়ং নাইট প্রোগ্রামে গিয়েছেন।সেটার লিংক এ গিয়ে শুনলাম উনার কথা।
এত সুন্দর ছিলো সেদিনের কথাগুলা।
ভাবলাম-নিজেকে সেকেন্ড চান্স দিয়েই দেখি।
দেখি জীবন আমাকে কি দেয়।এমন একটা মানুষকে জীবনসংগী হিসেবে আমার দরকার।
কিন্তু সমস্যা হলো! আমারতো কালো ছেলে পছন্দ না।আমার জামাই ফর্সা হতেই হবে।পরক্ষণেই ভাবলাম একবারতো ফর্সা একটারে পছন্দ করে ধরা খাইছি।এবার কালা মানুষরে পছন্দ করে দেখি।
উনার প্রোফাইলে রিলেশনশিপ দেখলাম সিংগেল।
ইনবক্সে নক দিয়েই সোজা বলে দিলাম-আই লাভ ইউ, ডু ইউ লাভ মি?'
উনি কিছুক্ষনের মধ্যেই কেন জানিনা রাজি হয়ে গেলেন।মনে হয় আমার অপেক্ষায় ছিলেন।কিন্তু উনার কন্ডিশন ছিলো-আগে বিয়ে।বিয়ের পরে প্রেম।আমিও রাজী হয়ে গেলাম।উনি নিজে থেকেই বললেন-আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।
আমি আমার মা কে সব বললাম।মা বললেন-ছেলেকে বলো ফ্যামিলির সাথে সেও আসতে।একবারে দেখাদেখি হয়ে যাক।উনি উনার ফ্যামিলি মেম্বারসহ মোট ১৫ জন কে নিয়ে আসলেন আমাকে দেখতে তাও রাত ১১ টায়।
কিছুক্ষন পর আমার মা ভাই আর মামা এসে আমাকে বললেন-আমাদের তো ছেলে খুব পছন্দ হইছে।তাদেরও তোমাকে পছন্দ হইছে।তারা চাচ্ছে এখনই বিয়ে করাই ফেলতে।তুমি কি বলো!
আমি বললাম-আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই করেন।
রাত ১.৩০ এ কাজী-কে ফোন করে আনানো হলো,বিয়ে হলো।
বিয়ের আগে আমরা কেউ কাউকে বাস্তবে দেখতে চাইনি।শুধু ছবি দেখেছি।যখন সবার সামনে আমাকে দেখাতে নিয়ে গেলো আমি তখন লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারিনি।উনার অবস্থাও সেইম ছিল।
বিয়ের পর বাসর ঘরে এই মানুষটাকে প্রথম সামনাসামনি দেখলাম।
কি সাদাসিধা!কি সহজসরল।ফেইজবুক ওয়াল দেখে যেমন কল্পনা করেছিলাম ঠিক তেমন।
১৭ই মার্চ সকালে উনাকে প্রপোজ করেছিলাম আর ২৪ মার্চ বিয়ে।প্রপোজ করার ৭ দিনের মাথায় বিয়ে।আমাদের ৭ দিনের সম্পর্ককে বিয়ের মাধ্যমে চিরস্থায়ী করে নিলাম।
তারপর,
আমাদের বিবাহিত জীবনের ৫ বছর চলছে!এর মধ্যে স্বামীর অনুপ্রেরণা আর সহযোগীতায় মেডিকেল কমপ্লিট করেছি।আজ আমি সফল একজন ডাক্তার। আজ আমার কোন রোগীর ব্লাডের প্রয়োজন হলে আমাকে আর ডোনার খুঁজতে হয় না।রোগী দেখা শেষ করে যখন বাসায় ফিরি দেখি আমার জন্য বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রহর গুনছে একজোড়া ভালবাসায় মোড়ানো আঁখি।তার কাঁধে মাথা রেখে দুরের ঐ আকাশ দেখি।আর তিনি আমাকে তারার সাথে তুলনা করতে করতে বাহুডোর থেকে বুকের মাঝে টেনে এনে স্বপ্ন বুনে দেন।আমি দেখি,মুগ্ধ চোখে দেখি।তারপর তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি।
এই ৫ বছরে কোন অপ্রাপ্তি নাই।পিছনে ফিরে তাকালে নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবতী মনে হয়।লাইফে এর চেয়ে সুখি হওয়া সম্ভব কিনা এই বিষয়ে আমার আইডিয়া নাই।
আগে লাইফের এতো মায়া ছিলো না।বিয়ের পর আর মরতে ইচ্ছা করে না।চড়াই-উতরাই পার করে নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পেরেছি এ-র চেয়ে ভাল থাকা বোধ হয় আর হয় না।
মাঝে মাঝে ভাবি-সেদিন যদি সুইসাইড করে ফেলতাম তাহলে জীবনের এত সুন্দর অধ্যায়টা দেখাই হতো না।যদি সেই মানুষটা চলে না যেত তাহলে এমন একটা মানুষের দেখা পেতাম না।আল্লাহ নিজেই কিছু কিছু সম্পর্ক নষ্ট করে দেন যাতে আমাদের জীবন নষ্ট না হয়।আসলে জীবনে কখনোই হতাশ হতে নেই।আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে শুকরিয়া আদায় করো।মানুষের জীবন পাল্টাতে খুব বেশী সময় লাগে না।সুখ থেকে অসুখে, আর অসুখে থেকে সুখে।আল্লাহর উপর ভরসা,ইচ্ছাশক্তি থাকলে আর ধৈর্য্য ধরতে পারলে জীবন সুন্দর হতে বাধ্য।
আলহামদুল্লিলাহ❤️
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন